ইসলামে মহিলাদের সেরা ৯ প্রকারের হিজাব – 9 Best Types of Hijab in Islam: হিজাব শব্দটি ঐতিহ্যবাহীভাবে মুসলিম মহিলাদের মাথা ঢাকার এবং ইসলামিক স্টাইলের পোশাককে নির্দেশ করে। সাধারণত এটি এমন একটি ধর্মীয় পর্দা যা সাধারণত মাথা এবং বুককে cover করে রাখে এজন্য মুসলিম মহিলারা তাদের নিকটবর্তী বা পরিবারের বাইরের কোনও পুরুষের উপস্থিতিতে এটি পরিধান করে। এই হিজাব পর্দাটি নারীদের মাথা, চেহারা বা দেহকে আবৃত করতে পারে যা বিনয়ের সহিত ইসলামী আইনকে মেনে চলে।
যুগ যুগ ধরে, পরপুরুষের কাছ থেকে নিজের সৌন্দর্যকে হেফাজত করতে বা গোপনীয়তা বজায় রাখতে এবং বেপর্দার দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে হিজাব পরিধান করা হয়। আজকে আমরা হিজাবের প্রকারভেদ- হিজাব কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়ে আলোচনা করব।
হিজাব কী?
হিজাব আরবী শব্দ। এর অন্য অর্থ হলো “আবরক, ওড়না, পর্দা, বিভাজক” ইত্যাদি হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে। কুরআনে এটি আক্ষরিক এবং রূপক উভয় অর্থে পৃথকীকরণ, সুরক্ষা এবং আচ্ছাদন সম্পর্কিত ধারণাকে বোঝায়।
পরবর্তীকালে, শব্দটির অর্থ বিকশিত হয় এবং বর্তমানে এটি সাধারণত মুসলিম নারীদের পর্দা বা নারী-পুরুষের মধ্যে পৃথকীকরণের ধারণাকে বোঝায়। সর্বোপরি Hijab শব্দটি মূলত মুসলিম নারীদের মাথা ঢেকে রাখা এবং ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাকে বোঝায়।
পর্দা সম্পর্কে হাদিস কী? Importance of Hijab in Islam
মুসলিম নারীদের জন্য পর্দা করা একটি ফরজ ইবাদত। পর্দা ফরজ নিয়ে কুরআন ও হাদিসে এত বেশি পরিমানে উল্লেখিত হয়েছে যে এই বিষয়ে আর নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহ নারীর সম্মান রক্ষার জন্য এবং পর-পুরুষের দৃষ্টি থেকে বাঁচাবার জন্য পর্দাকে ফরজ করে দিয়েছেন।
পর্দার বিধান কি ?
পর্দা এমন একটা বিধান যেটি ইসলামে সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য। কুরআন-সুন্নাহর একটা অকাট্য দলীলের সঠিক প্রমাণ এর ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাগুলির মতো এটি সুস্পষ্ট এক ফরয বিধান। এ বিধানের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখাই হলো ঈমানের পূর্বশর্ত। সুতরাং এ বিধানকে হালকা মনে করা কিংবা এ বিধানকে অমান্য করলে নিশ্চয়ই আপনার আর ইমান থাকবে না।
হিজাব পরার উপকারিতা বা পর্দার করার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা কী?
“হিজাব (বোরকা) শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে ক্ষত সৃষ্টির কবল থেকে রক্ষা করে।” সৌদি আরবে বিশেষ করে নারীদের নাক ও গলায় ক্যান্সারের আক্রান্তের হার খুবই কম।
অধ্যাপক মালাকারেরর মতে
সুতরাং পর্দার বিধান পালনে অভ্যস্ত মা বোনেরা নিজেদের লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদের ঝুঁকিও কিন্তু রক্ষা করতে পারে। পর্দা বা হিজাব ইসলামের মৌলিক বিধানের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যতদিন এই পৃথিবীতে পর্দার ব্যবস্থা অভ্যাহত থাকবে, ততদিন এই পৃথিবীর বুকে শান্তি নিরাপত্তা ও শালীন পরিবেশ টিকে থাকবে।
চলো ইসলামে মহিলাদের সেরা ৯ প্রকারের হিজাব (9 Best Types of Hijab in Islam) সম্পর্কে জানি:
হিজাব কত প্রকার ও কি কি?
আজকে আমরা হিজাবের প্রকারভেদ সম্পৰ্কে জানবো ইনশাআল্লাহ। হিজাব বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন :
- নিকাব (Niqab) হিজাব
- খিমার (Khimar) হিজাব
- জিলবাব (আরবি: جلباب)
- বুশিয়্যা (Bushiya)
- শায়লা (Shayla) হিজাব
- মুকেনা (Mukena) হিজাব
- আল-আমিরা (Al-Amira) হিজাব
- দোপাট্টা বা ওড়না (Dopatta or Orna)
- চাদর (Sheets)
১. নিকাব (Niqab) হিজাব

এক প্রকার ঘোমটা যা নাকের হাড়ের উপর আবদ্ধ থাকে এবং নিচে মুখটিকে ঢেকে রাখে। একে “অর্ধ নিকাব”-ও বলা হয়।
নিকাব এমন একটি ওড়না যা মুখটি cover করে রাখে এবং সাধারণত কালো হয়। মহিলারা প্রায়শই এটি, একটি মাথার স্কার্ফ এবং একটি আবায়া, বা অন্য পোশাকের সাথে জুড়ে দেয় যা তাদের দেহকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। এই ওড়নাটি যেভাবে পরিধান করা হয় তা অঞ্চল থেকে অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়, তবে দুটি প্রধান শৈলী রয়েছে।
- মুখ পুরোপুরি cover করে রাখে।
- চোখের জন্য আলাদা ফাঁকা জায়গা থাকে যার ফলে মানুষ দেখতে পায়।
২. খিমার (Khimar) হিজাব

খিমার হলো ইসলাম অনুমোদিত একধরণের ছিদ্রযুক্ত অসম্ভব সুন্দর একটি গোমটা যা মুসলিম নারীরা পর্দা রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। খিমার পড়লে চুল,ঘাড়, এবং কাঁধকে পুরোপুরি দেখে ঢেকে রাখে। এটি পরার ফলে শুধু মাত্র চোখ ও নাকের উপরের অংশ দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে খিমার অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপডেট মুসলিম নারীরা ফ্যাশন এর ক্ষেত্রে প্রায়শই হিজাব ব্যবহার করে।
খিমারের জন্য বিভিন্ন দৈর্ঘ্য রয়েছে; এটি সাধারণত কোমরের কাছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, কিছু মহিলা দীর্ঘ দৈর্ঘ্য পছন্দ করেন যা হাঁটুতে পৌঁছতে পারে। আগে এটি মিশরীয় মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশও এই খিমার অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যারা খাস পর্দা করতে চায় তাদের জন্য তো এই খিমার এত এত বেশি সুন্দর পোশাক যে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই খিমারের design এত বেশী সুন্দর যে সব বয়সি নারীদের জন্য মানানসই।
৩. জিলবাব (আরবি: جلباب)

ইন্দোনেশিয়ায় জিলবাব শব্দটি কেবলমাত্র মাথার পর্দাকে বোঝায়। এটি এমন এক ধরনের বাইরের পোশাক যা দেখতে দীর্ঘ রেইনকোট বা ট্রেঞ্চকোটের মতো লাগে।
৪. বুশিয়্যা (Bushiya)

এটি এক প্রকার ঘোমটা, যা কপালে বাঁধা হয় এবং পুরো মুখটি ঢাকা থাকে। চোখ দিয়ে দেখার জন্য এটিতে কোন ফাঁকা জায়গা নেই; তবে কাপড়ের মধ্য দিয়ে যথেষ্ট স্পষ্টভাবে সবকিছু দেখা যায়। এটি মধ্য প্রাচ্য, বিশেষত পারস্য উপসাগরের অঞ্চলগুলোতে বেশ প্রচলিত।
এই হিজাব পোশাকগুলো এতটাই সুন্দর যে এর চেয়ে ভালো মানের পর্দা আমি মনে করি আর হতে পারে না। আপনারা মা-বোন যারা পরিপূর্ণ খাসভাবে পর্দা করতে চান তারা এই হিজাব পোশাকগুলো choose করতে পারেন।
৫. শায়লা (Shayla) হিজাব

দীর্ঘ, আয়তক্ষেত্রাকার ওড়না, মাথার চারপাশে আবৃত থাকে এবং কাঁধে গুঁজে রাখা হয় বা পিন দিয়ে আটকানো হয়। এককথায় এটিকে আমরা বাঙালিরা ওড়না বলে চিনে থাকি। এটি পারস্য উপসাগরীয় আরব রাজ্যে জনপ্রিয়।
৬. মুকেনা (Mukena) হিজাব

প্রার্থনার জন্য প্রায় একচেটিয়াভাবে পরিহিত একটি ইন্দোনেশিয়ান হিজাব। এটি দুটি ফিতা দিয়ে মাথার পিছনে বেঁধে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে সাধারণত এই ধরণের হিজাব পোশাকগুলোর বেশি প্রচলন দেখা যায়। নামাজ পড়ার সময় ব্যবহারের পাশাপাশি আমরা বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সময়ও ব্যবহার করতে পারি।
৭. আল-আমিরা (Al-Amira) হিজাব

একটি দ্বি-অংশবিশিষ্ট ঘোমটা। এটিতে একটি আঁটসাঁট টুপি থাকে, যা সাধারণত তুলা বা পলিয়েস্টার থেকে তৈরি করা হয় এবং তার সাথে নলের মতো ওড়না থাকে।
নামাজ পরার জন্য এটি একটি মানানসই পোশাক। এটি পরিধান করলে মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জি ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশ ঢাকা থাকে। ফলে চুল ,কান, কাঁদ সব ঢাকা থাকে। অত্যন্ত সুন্দর এই আল-আমিরা।
৮. দোপাট্টা বা ওড়না (Dopatta or Orna)

এটি সাধারণ পাকিস্তানি, পাঞ্জাবি, ভারতীয় এবং বাংলাদেশি পোশাক। সুতার বুননে তৈরি একটি বড় রঙিন কাপড় যা মাথা এবং কাঁধগুলিকে ঢেকে রাখে। এটি সাধারণত সালওয়ার-কামিজের পায়জামা এবং কুর্তির সাথে রঙ বা নকশা মিলিয়ে একটি থ্রি-পিস সেটে বিক্রি হয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারীরা এটি পরিধান করে।
৯. চাদর (Sheets)

এটি একটি ইরানীয় ঐতিহ্যবাহী বাইরের পোশাক (অন্যান্য দেশেও এটি প্রচলিত) যা মাথা এবং দেহকে সুরক্ষা দেয় এবং পূর্ণপ্রসারিত দেহে অর্ধবৃত্ত অবস্থায় থাকে। এটি হাত দিয়ে গায়ে আটকে রাখা হয় বা কেবল বাহুতে জড়িয়ে রাখা হয়।
পর্দা না করার করুণ পরিণতি
পর্দাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ধর্মে ফরজ করে দিয়েছেন। সুতরাং বুজতেই পারছেন পর্দাহীনতার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হবে। নিশ্চয় তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকি তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন থেকে কঠিনতরো শাস্তি। সুতরাং পর্দাহীন কোনো নারী কিছুতেই জান্নাত প্রত্যাশা করতে পারে না। পর্দা না করার করুণ পরিণতি সম্পর্কে আজকে এই পর্যন্তই বলবো আর বেশি বাড়াবো না তবে পরবর্তী পোস্টে ইনশাআল্লাহ এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বিষশ্লেষন করবো।
Read more: Top 10 Best Muslim Hijab Wedding Dress to Buy USA